করোনাভাইরাসের কারণে এমনিতেই মাস্ক পরতেন মগবাজার বিস্ফোরণে ধসে পড়া ভবনটির পাশের ভবনের নিরাপত্তা কর্মী জহির হোসেন। এখন তার দুটো মাস্কেও কাজ হচ্ছে না। কেননা ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটি থেকে আসা পচা মাংসের দুর্গন্ধে টিকে থাকাই মুশকিল হয়ে পড়েছে। তার মত ভবনটির পাশ দিয়ে চলাচলের সময় মুখে মাস্ক থাকলেও সবাইকে নাক চেপে চলতে হচ্ছে।
মগবাজারের ওয়্যারলেস গেটের তিন তলা ধসে যাওয়া ভবনটি থেকে শনিবার দুপুরেও এমনই কড়া পচা দুর্গন্ধ বের হওয়ায় আশেপাশের বাসিন্দা, পথচারীসহ সবাইকে মাস্কসহ নাক চেপে ধরে চলতে দেখা যায়।
তবে কি ভেতরে মরদেহ আছে? এমন প্রশ্নে আশেপাশের বাসিন্দাদের অনেকেই বলছেন, বিস্ফোরণস্থলের ভবনটির নিচতলায় বেঙ্গল মিটের শোরুম ছিল। সেখানে ফ্রিজে প্রচুর মাংস ছিল, যা নষ্ট হয়েই মূলত দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে বলে তাদের ধারণা।
পুলিশ বলছে, ঘটনার পরদিন ভবনের ধ্বংসস্তুপ থেকে একজন নিরাপত্তা কর্মীর লাশ উদ্ধার করা হয়। বর্তমানে কেউ নিখোঁজ থাকার কোনো সংবাদ নেই। এ নিয়ে কারও অভিযোগ নেই। ফলে ভেঙে পড়া ভবনের নিচে চাপা পড়া কোনো মানুষের লাশ থেকে দুর্গন্ধ ছড়ানোর আশঙ্কা খুবই কম বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা।
রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বলেন, “তাদের কাছে নিখোঁজের কোনো সংবাদ নেই। তবে বেঙ্গল মিটের মাংস থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।” ফায়ার সার্ভিসও ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের ধ্বংসস্তুপ থেকে প্রাথমিক উদ্ধার কাজ শেষ করেছে।
অন্যদিকে ভেঙে পড়া ইট, রডসহ ধ্বংসস্তুপ সরিয়ে নিতে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও ফায়ার সার্ভিসকে পুলিশের পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ‘ডি’ স্টেশনের কর্ণধার সুরকার সুমন কল্যাণের কার্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের কাছেই। মাস্কের মধ্যেই নাক চেপে ধরে তাকে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের পেছনের রাস্তা দিয়ে পার হতে দেখা যায়। তিনি বলেন, “যতই দিন গড়াচ্ছে, গন্ধটা যেন বেশি ছড়াচ্ছে। “গলির রাস্তাটা পুলিশ আজ খুলে দিলেও পচা দুর্গন্ধের কারণে চলাচল করা যাচ্ছে না। তারপরও চলতে হচ্ছে।” তার মত অন্য এলাকাবাসীও এই দুরবস্থা থেকে দ্রুত মুক্তি চেয়েছেন।
গত ২৭ জুন সন্ধ্যায় রাজধানীর মগবাজারের একটি তিনতলা ভবনের নিচতলা ও দোতালা প্রচণ্ড বিস্ফোরণে ধ্বংসস্থুপে পরিণত হয়। নিচতলার সামনে ও পেছনের উভয় পাশেই এবং দোতালার পেছন দিক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ইতিমধ্যে ভবনটিকে ব্যবহার অযোগ্য ঘোষণা করা হয়। ভয়াল এই বিস্ফোরণে আশেপাশের এক ডজনেরও বেশি ভবনের কাচ ভেঙে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে উপর থেকে।
এতে রাস্তায় থাকা তিনটি বাসও ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যেটির মধ্যে একটির চালক মারা যান। এই ঘটনায় ওইদিনই ছয়জনসহ এই পর্যন্ত ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এই ঘটনার কারণ খুঁজতে গঠিত পুলিশের তদন্ত কমিটির প্রধান কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) এর প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আসাদুজ্জামান বলেন, “তদন্ত শেষ হতে আরো সময় লাগবে। “নির্ধারিত সময়ের চেয়ে আরও কিছুদিন বাড়তে পারে।”
এই ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ সাজ্জাদ হোসাইন বলেন, “গ্যাস থেকেই এই বিস্ফোরণ ঘটেছে এ ব্যাপারে আমরা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত। “আরো কিছু তথ্য পেতে তদন্ত কমিটি কাজ করছে, প্রতিবেদন আসার পর বিস্তারিত বলা যাবে।”
রাজউক এর পরিচালক প্রকৌশলী মোবারক হোসেন জানান, ভবনটিকে ব্যবহার অনুপযোগী ঘোষণার পাশাপাশি এর মালিককে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে দেখা করতে বলা হয়েছে। শুধু ওই ভবন নয়, আশেপাশের একাধিক ভবনের মালিককেও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে দেখা করতে বলা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা খুব দ্রুত অবৈধ ভবনের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করব।”
কাঁচের পরিবর্তে ইটের গাঁথুনি
মগবাজারের ক্ষতিগ্রস্ত ওই ভবনের বিপরীতেই আড়ং এর একটি বিক্রয়কেন্দ্র। ভয়াবহ ওই বিস্ফোরণে আশেপাশের অন্যসব ভবনের মত এটিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। চারতলা পর্যন্ত ভবনের আড়ং অংশের সব কাঁচ ভেঙে পড়ে। শনিবার দুপুরে গিয়ে দেখা যায় ভবনটির কাঁচের ভেঙে যাওয়া অংশ ইটের গাঁথুনি দিয়ে বন্ধ করা হচ্ছে।
একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মেরামতের এই কাজ করা হচ্ছে। এই কাজের দেখভাল করার দায়িত্বে থাকা কামাল হোসেন জানান, আড়ংয়ের বিক্রয়কেন্দ্রের প্রায় সাত হাজার বর্গফুট কাঁচ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি বলেন,”এর প্রায় সবটুকু এখন কাঁচের পরিবর্তে ইটের গাঁথুনি দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। “সামনের দিকে ১০ ইঞ্চি পেছনে ৫ ইঞ্চি ইটের গাঁথুনি দেওয়া হচ্ছে। তবে কিছু জায়গায় কাঁচ থাকবে।”